ইসি শতভাগ প্রস্তুত: ফেব্রুয়ারির প্রথমভাগেই সংসদ নির্বাচন সম্ভব
আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকবে, চট্টগ্রাম বিভাগে বৃষ্টির সম্ভাবনা
জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস: বিএনপির ভেতরেই কেন বিস্মৃত একটি দিন?
জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস আজ
সাতকানিয়ায় কলেজছাত্রী নাদিয়া নিখোঁজ: সন্ধান চেয়ে পরিবারের আবেদন
সাতকানিয়ায় ইউএনও পরিচয়ে প্রতারণা: জনসাধারণকে সতর্ক থাকার আহ্বান
বিজিবির অভিযানে ১৫ লাখ টাকার চোরাচালান পণ্য আটক
নকলার কৃষি কর্মকর্তাকে পেটালেন ছাত্রদল নেতা
সাতকানিয়ায় জব্দকৃত অবৈধ গ্যাস সিলিন্ডার নিলাম স্থগিত
চট্টগ্রাম–কক্সবাজার মহাসড়ক ছয় লেন নির্মাণের দাবিতে স্মারকলিপি প্রদান
ভুয়া নিয়োগ, থার্ড পার্টি দ্বারা রোগ নির্ণয়, অ্যানেসথিওলজিস্ট ছাড়াই অপারেশন, অর্থ লোপাট,
১ম পর্ব
এক সময়ের গর্ব, সাতকানিয়া উপজেলার প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত সাতকানিয়া ডায়াবেটিক জেনারেল হাসপাতালের সভাপতি আবুল কালাম সামশুল হক (তোহ্ফা)’র অনিয়ম, দুর্নীতি ও অব্যবস্থাপনার কারণে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে। দাতব্য এই হাসপাতালটির পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি তোহার বিরুদ্ধে উঠেছে নানা গুরুতর অভিযোগ, যা শুধু একটি প্রতিষ্ঠানের নয়, পুরো এলাকার মানবসেবামূলক ভাবমূর্তির জন্যই কলঙ্কজনক হয়ে উঠেছে।
স্বেচ্ছাচারিতা ও ভুয়া নিয়োগ:
হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, সভাপতির স্বেচ্ছাচারিতায় গুরুত্বপূর্ণ পদে ভুয়া সনদধারী ল্যাব টেকনিশিয়ান, নার্স ও কাউন্সিলর নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এরা অনেকে কোনো স্বীকৃত প্রশিক্ষণ ছাড়াই রোগ নির্ণয় বা চিকিৎসা কার্যক্রমে যুক্ত রয়েছেন।
অডিট বন্ধ, হিসাব অস্বচ্ছ:
যদিও প্রতিষ্ঠানটি অলাভজনক, তবুও সভাপতি তোহ্ফা নিজে প্রতি মাসে ৬০ হাজার টাকা বেতন গ্রহণ করছেন, যা প্রতিষ্ঠানটির সংবিধান ও দাতব্য নীতির পরিপন্থী। দীর্ঘদিন ধরে হাসপাতালের অডিট কার্যক্রমে গাফিলতি, যথাযত কর্তৃপক্ষ নিয়মিত অডিট রিপোর্ট তদারকি নেই , ফলে আর্থিক স্বচ্ছতা নেই। দাতাদের দেওয়া অনুদান, চিকিৎসা ফি এবং বিভিন্ন খাতের ব্যয়ের কোনো আনুষ্ঠানিক হিসাব প্রকাশ করা হয় না।
পরিচালনা পর্ষদের একাধিক সদস্য বিষয়টি জানলেও অদৃশ্য কারণে কেউ পদক্ষেপ নিচ্ছেন না বলে অভিযোগ রয়েছে। এ ব্যাপারে হাসপাতালের সেক্রেটারি ছৈয়দ আবদুল্লাহ ফরহাদের বক্তব্য নেওয়ার জন্য মোবাইলে একধিকবার যোগাযোগ করে না পেয়ে whats app এ মেসেজ দিয়ে সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে হাসপাতালের বিভিন্ন অনিয়ম নিয়ে কথা বলতে চাইলে তিনি কোন প্রতিউত্তর দেননি।
স্বাস্থ্য আইন ভঙ্গ করে থার্ড পার্টি পরীক্ষা:
সবচেয়ে উদ্বেগজনক অভিযোগ হলো, হাসপাতালে থার্ড পার্টি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে রোগ নির্ণয়ের পরীক্ষা-নিরীক্ষা করানো হচ্ছে, যা বাংলাদেশ স্বাস্থ্য আইন ও বিএমডিসি নির্দেশিকার স্পষ্ট লঙ্ঘন। অর্থাৎ, হাসপাতাল নিজস্ব ল্যাবরেটরি না ব্যবহার করে বাইরের বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে গোপন চুক্তিতে রোগীর পরীক্ষা করাচ্ছে এবং অতিরিক্ত ফি আদায় করছে।
সাতকানিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. জসিম উদ্দীন জানান, “এভাবে থার্ড পার্টি দিয়ে রোগ নির্ণয় করানো আইনবিরোধী। এতে রোগীর তথ্য, সঠিক ফলাফল ও চিকিৎসা, সবকিছু ঝুঁকির মুখে পড়ে।”
অ্যানেসথিওলজিস্ট ছাড়াই সিজার অপারেশন:
রোগীদের অভিযোগ, হাসপাতালে অ্যানেসথিওলজিস্ট ছাড়াই সিজারিয়ান অপারেশন করানো হয়। এমনকি নার্সদের দিয়েও অস্ত্রোপচার পরিচালনার অভিযোগ উঠেছে— যা রোগীর জীবনের জন্য সরাসরি বিপজ্জনক। এ ছাড়া ডাক্তার ও স্টাফদের অশোভন আচরণ, ভুল চিকিৎসা প্রদান, ও নিয়মবহির্ভূতভাবে অতিরিক্ত ফি আদায়ের অভিযোগও পাওয়া গেছে।
ফি তালিকা উন্মুক্ত নয়, স্বচ্ছতার অভাব:
হাসপাতালের নিয়ম অনুযায়ী সকল চিকিৎসা ও পরীক্ষার ফি তালিকা জনসমক্ষে টানানোর কথা থাকলেও, তা দেখা যায় না। ফলে রোগীরা বিভ্রান্ত হন এবং অভিযোগ করেন যে— “কে কত নেবে, তা পুরোপুরি স্টাফদের মর্জির ওপর নির্ভর করে।”
জনআস্থা হারাচ্ছে দাতব্য প্রতিষ্ঠান:
সাতকানিয়া ডায়াবেটিক জেনারেল হাসপাতাল বহু বছর ধরে নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্ত জনগণের চিকিৎসার আশ্রয়স্থল ছিল। কিন্তু সাম্প্রতিক অনিয়মের কারণে রোগীরা এখন বিকল্প হাসপাতাল ও বেসরকারি ক্লিনিকে চিকিৎসা নিতে বাধ্য হচ্ছেন। একজন স্থানীয় শিক্ষক বলেন, “মানবসেবার নামে যা চলছে, তা আসলে মানুষের সঙ্গে প্রতারণা।”
সভাপতি আবুল কালাম সামশুল হক (তোহ্ফা)’র বিরুদ্ধে অনিয়ম, অভিযোগের পাহাড়। তার ভাষ্য নেওয়ার জন্য তার ব্যবহৃত মোবাইল নম্বর ও হোয়াটস এপ নম্বরে একাধিকবার কল, মেসেজ দিয়ে যোগাযোগ করতে চাইলে তিনি কোন সাড়া দেন নি বিধায় তার বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।
সাতকানিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. জসিম উদ্দীনের সাথে সাতকানিয়া ডায়বেটিক হাসপাতালের অনিয়ম ও দুর্ণীতির বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি জানান, “ডায়বেটিক হাসপাতাল একটি দাতব্য প্রতিষ্ঠান যার অনুমতি ও প্রশাসনিক দিক দেখভাল করার দায়িত্ব উপজেলা সমাজসেবা অফিসের, চিকিৎসা ও রোগ নির্ণয় সম্পর্কিত আমরা দেখভাল করি, এই হাসপাতালে বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ আমাদের কানেও এসেছে, তবে ভুক্তভোগি যদি এরকম অনিয়মের ব্যাপারে লিখিত অভিযোগ করে তাহলে আমরা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিব।”
স্থানীয়দের দাবি:
তদন্ত হোক, প্রতিষ্ঠান বাঁচুক, সাতকানিয়া উপজেলার নাগরিক সমাজ, শিক্ষক, সাংবাদিক ও সমাজকর্মীরা হাসপাতালের সকল কার্যক্রমের ওপর বিস্তৃত তদন্ত দাবি করেছেন। তাদের মতে, “এটি কোনো ব্যক্তির সম্পত্তি নয়; এটি জনগণের দানে গড়া দাতব্য প্রতিষ্ঠান। সরকার যদি এখনই ব্যবস্থা না নেয়, তাহলে এই হাসপাতাল আর টিকবে না।”
দাতব্য প্রতিষ্ঠান মানে মানবসেবা, ব্যক্তিস্বার্থ নয়। সাতকানিয়া ডায়াবেটিক জেনারেল হাসপাতালের বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগগুলো যদি সত্য হয়, তবে এটি কেবল আইনবিরোধী নয়— মানবতার বিরুদ্ধেও অপরাধ। সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরের উচিত অবিলম্বে তদন্ত করে দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া এবং প্রতিষ্ঠানটি পুনর্গঠনের উদ্যোগ গ্রহণ করা। কারণ, যে হাসপাতাল একদিন মানুষের জীবন বাঁচাত, আজ সেখানে মানবিকতা নিজেই রোগী হয়ে পড়েছে।
মন্তব্য করুন