ইসি শতভাগ প্রস্তুত: ফেব্রুয়ারির প্রথমভাগেই সংসদ নির্বাচন সম্ভব
আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকবে, চট্টগ্রাম বিভাগে বৃষ্টির সম্ভাবনা
জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস: বিএনপির ভেতরেই কেন বিস্মৃত একটি দিন?
জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস আজ
সাতকানিয়ায় কলেজছাত্রী নাদিয়া নিখোঁজ: সন্ধান চেয়ে পরিবারের আবেদন
সাতকানিয়ায় ইউএনও পরিচয়ে প্রতারণা: জনসাধারণকে সতর্ক থাকার আহ্বান
বিজিবির অভিযানে ১৫ লাখ টাকার চোরাচালান পণ্য আটক
নকলার কৃষি কর্মকর্তাকে পেটালেন ছাত্রদল নেতা
সাতকানিয়ায় জব্দকৃত অবৈধ গ্যাস সিলিন্ডার নিলাম স্থগিত
চট্টগ্রাম–কক্সবাজার মহাসড়ক ছয় লেন নির্মাণের দাবিতে স্মারকলিপি প্রদান
চট্টগ্রামের সাতকানিয়া উপজেলার একটি মনোরম সড়ক—যার দুই পাশে সারি সারি গাছ যেন সবুজ ছায়ার টানেল তৈরি করেছে। গ্রামের মানুষ এই রাস্তা দিয়ে হাঁটে, শিশুরা সাইকেল চালায়, আর পথচারীরা বিশ্রাম নেয় গাছের ছায়ায়। কিন্তু সেই শান্ত-নিরিবিলি সড়কের দুই পাশে দাঁড়িয়ে থাকা প্রায় এক হাজারেরও বেশি ফলজ, বনজ ও ছায়া প্রদানকারী গাছ এখন মৃত্যুপ্রায়।
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (LGED) সড়কটি ১২ ফুট থেকে ১৮ ফুট প্রশস্ত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তিন মাস আগে প্রকল্প অনুমোদনের পর এখন চলছে টেন্ডার প্রক্রিয়া। প্রকল্প বাস্তবায়ন শুরু হলে সড়কের দুই পাশের গাছগুলো কেটে ফেলা হবে বলে নিশ্চিত করেছেন স্থানীয় কর্মকর্তারা।
প্রশস্তকরণ বনাম পরিবেশ বিপর্যয়
রাস্তা প্রশস্ত করা হবে—এই সংবাদে প্রথমে এলাকার মানুষ খুশি হয়েছিল। কিন্তু গাছ কাটার খবর প্রকাশ হতেই উদ্বেগ, ক্ষোভ আর শোক ছড়িয়ে পড়ে। স্থানীয়দের দাবি, উন্নয়ন চাই, তবে তা যেন প্রকৃতিকে হত্যা করে না। সাতকানিয়া উপজেলা চত্বর থেকে কেরানিহাট রাস্তার মাথা পর্যন্ত ৪ কিলোমিটার জুড়ে থাকা সড়কের দুই পাশে এই গাছগুলো প্রায় তিন দশক আগে রোপণ করা হয়েছিল। এখন সেগুলো গ্রামের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখে, ঝড়-জলোচ্ছ্বাস ঠেকায় এবং অসংখ্য পাখির আশ্রয়স্থল হিসেবে কাজ করে।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশবিজ্ঞান বিভাগের এক শিক্ষক বলেন, “একসঙ্গে এত বিপুল পরিমাণ গাছ কাটা হলে স্থানীয় তাপমাত্রা বেড়ে যাবে, বর্ষার সময় ভূমিক্ষয় ও জলাবদ্ধতা বাড়বে। উন্নয়ন প্রয়োজন, কিন্তু প্রকৃতি বাঁচিয়ে উন্নয়নই টেকসই উন্নয়ন।”
প্রকল্পে পরিবেশ মূল্যায়ন ছাড়াই টেন্ডার
LGED সূত্রে জানা গেছে, সড়কটি “গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প”-এর আওতায়। কিন্তু প্রকল্পের পরিবেশগত প্রভাব মূল্যায়ন (EIA) সম্পন্ন না করেই টেন্ডার আহ্বান করা হয়েছে।
স্থানীয় একজন ইউপি চেয়ারম্যান বলেন, “আমরা রাস্তা প্রশস্তকরণের বিরোধী নই, কিন্তু কেন গাছ না কেটে বিকল্প পরিকল্পনা নেওয়া যাবে না? প্রয়োজনে এক পাশ সরিয়ে, বা গাছ স্থানান্তর করে কাজ করা সম্ভব।”
স্থানীয়দের বেদনা ও প্রতিবাদ
গাছ কাটা নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ইতিমধ্যে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়েছে। নলুয়া ইউনিয়নের শিক্ষক মো. শহিদুল ইসলাম বলেন, “এই গাছগুলো শুধু কাঠ নয়, এগুলো আমাদের জীবনের অংশ। এগুলো হারালে সাতকানিয়া তার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য হারাবে।”
এদিকে, স্থানীয় পরিবেশবাদী সংগঠনগুলো বলছে, সরকার যদি প্রকৃত অর্থে ‘সবুজ বাংলাদেশ’ গড়তে চায়, তবে সাতকানিয়ার এই প্রকল্পে তা বাস্তব পরীক্ষার মুখে পড়েছে।
বিকল্প সমাধানের দাবি
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, উন্নত দেশগুলোতে সড়ক প্রশস্তকরণের সময় গাছ কাটা নয়—গাছ স্থানান্তর করা হয়। বাংলাদেশেও ঢাকার উত্তরা, রাজশাহী ও সিলেটে পরীক্ষামূলকভাবে এই পদ্ধতি সফল হয়েছে।
পরিবেশকর্মী রুবিনা হোসেন বলেন, “গাছ কাটা নয়, সংরক্ষণই হতে হবে উন্নয়নের প্রথম শর্ত। সরকার চাইলে এই গাছগুলো বিশেষ যন্ত্রের সাহায্যে তুলে অন্যত্র রোপণ করতে পারে। এতে প্রকৃতি বাঁচবে, উন্নয়নও থেমে থাকবে না।”
মানববন্ধনের প্রস্তুতি
জানা গেছে, স্থানীয় শিক্ষক, শিক্ষার্থী, সাংবাদিক ও নাগরিক সমাজ গাছ রক্ষার দাবিতে মানববন্ধন ও গণস্বাক্ষর কর্মসূচির প্রস্তুতি নিচ্ছে। সাতকানিয়া উপজেলা সদরে আগামী সপ্তাহে বড় আকারের প্রতিবাদ সমাবেশের পরিকল্পনাও রয়েছে।
সরকারের উন্নয়ন প্রকল্পগুলোতে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা এখন সময়ের দাবি। সাতকানিয়ার এই গাছগুলো কেবল প্রকৃতির অংশ নয়—এগুলো একটি প্রজন্মের স্মৃতি, অনুভূতি ও জীবনের শ্বাস-প্রশ্বাস। উন্নয়ন মানেই গাছ কাটা নয়, বরং গাছ বাঁচিয়ে উন্নয়নই প্রকৃত অগ্রগতি। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান—অবিলম্বে প্রকল্পটি পুনর্বিবেচনা করুন, এই সবুজ সম্পদকে রক্ষা করুন।
মন্তব্য করুন